তারিখ: ৩১-০৩-২০২৪
প্রেসনোট
শেকৃবিতে ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের ক্যানিং-এর উপর কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। এই মাছ স্বাদে অতুলনীয় ও গন্ধের জন্য দেশ ও বিদেশে রয়েছে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এই অতুলনীয় স্বাদের জন্য ইলিশকে মাছের রাজাও বলা হয়। এই ইলিশ দিয়ে তৈরি হয় নানান ধরনের মুখরোচক খাবার। তবে ইলিশ দিয়ে প্রথমবারের মত কৌটাজাতকৃত খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) এর এক দল গবেষক যার নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব।
ইলিশ অধিক আমিষ ও চর্বিযুক্ত মাছ। ইলিশের চর্বিতে বিদ্যমান ওমেগা-৩ নামক অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে। ইলিশে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে হিমায়িত করা হলেও এটি জারিত হয়ে এর গুণগত মান দীর্ঘ সময় ভাল থাকে না। আবার চর্বিযুক্ত হওয়ায় ইলিশ মাছ শুঁটকি হিসাবেও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। এই প্রেক্ষাপটে প্রায় দুই বছর সময় ধরে গবেষণা করে ইলিশের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য কৌটাজাতকৃত পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন শেকৃবি এর এই গবেষকদল। এই গবেষণাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (ঝঈগঋচ) এর অর্থায়নে পরিচালিত হয়।
গত ৩০ মার্চ শনিবার সকাল ১০ টায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের ক্যানিং এর উপর একটি কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাছের কৌটাজাতকরণের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশে এই শিল্পের সম্ভাবনা তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব। তিনি বলেন, তার পরিচালিত গবেষণায় কৌটাজাতকৃত ইলিশকে এক বছর পর্যন্ত রেখে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, এর গুনগত মান অনায়াসেই ভাল থাকে। এই সময়ের মাঝে জারণ ক্রিয়া তেমন প্রভাব ফেলে না এবং কৌটাজাত ইলিশে এন্টি অক্সিডেন্ট দেয়ারও প্রয়োজন হয় না। এর মাঝে কোনো অনুজীবের বিকাশও ঘটেনি। এর স্থায়িত্ব বা শেল্ফ লাইফ এবং গুনগতমান এক বছরের বেশী সর্বোচ্চ আরো কতদিন থাকে তা পর্যবেক্ষণ কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
উক্ত কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, গেস্ট অফ অনার হিসেবে মঞ্চ অলংকৃত করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব সৈয়দ মোঃ আলমগীর । এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম এবং সাস্টেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের পরিচালক জনাব মোঃ জিয়া হায়দার চৌধুরী। উক্ত কর্মশালাটিতে অংশ নেয়া মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারক ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং মৎস্য কৌটাজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠায় তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকে সাগর ফিশ এক্সপোর্ট এর কর্ণধার জনাব আবেদ আহসান সাগর বলেন যে বিশ্বে এই ক্যান শিল্পের বিরাট বাজার রয়েছে। তাই রপ্তানির সম্ভাবনাও প্রচুর। কিন্তু দেশে এই শিল্পটি একেবারে নতুন হওয়ায় তারা এই শিল্পে বিনিয়োগ করলে এসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করেন। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোঃ আলমগীর বলেন সরকার মৎস্য শিল্পের উন্নয়নে সবসময় আন্তরিক। সরকার তার নির্বাচনে ইস্তিহারে মৎস্য ও মৎস্যজাত পন্য রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তার পরিমান হলো পনের হাজার কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৌটাজাত ইলিশ এবং অন্যান্য কৌটাজাত মাছ হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্য। তাই তিনি টিনজাত মাছ উৎপাদনে এগিয়ে আসার জন্য মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারক ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি আহবান জানান এবং এবিষয়ে সরকারের সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন ইলিশ আমাদের একটি জিআই পন্য। জিআই পন্যের গুরুত্বকে কাজে লাগিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারলে এটি আরও সার্থকতা পায়। অধ্যাপক হাবীবের এই গবেষণা এই গবেষণা লব্ধ ফল অর্থাৎ টিনজাত ইলিশ তৈরির এই পদ্ধতি নিঃসন্দেহে এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান। গবেষণাটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বিশেষ করে এর শেল্ফলাইফ ন্যূনতম ০২ বছর পর্যন্ত পরীক্ষা করা দরকার, এতে করে রপ্তানি সজতর হবে। তিনি টিনজাত ইলিশের মত এই ধরণের উদ্ভাবনীমূলক গবেষণায় মৎস্য অধিদপ্তরকে অর্থায়নের আহবান জানান। তিনি ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতার মাধ্যমে গবেষণার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি উদ্ভাবনমূলক গবেষণায় ইন্ডাস্ট্রিকেও এগিয়ে আসতে হবে ও অর্থায়ন করতে হবে। এতে করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি বা পন্যকে কাজে লাগিয়ে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও গবেষণায় এগিয়ে যেতে পারে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন ও প্রশিক্ষণ নেন মৎস্য কৌটাজাতকরণ শিল্প স্থাপন ও ব্যবসায়ে আগ্রহী দেশের বিভিন্ন মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, স্বনামধন্য একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা । এই কর্মশালায় কৌটা উৎপাদন শিল্পের স্বত্বাধিকারী, খাদ্য কৌটাজাত শিল্প কারখানায় হ্যাসাপ ও গুণমান যাচাইকারী নিরীক্ষক ও সনদপ্রদানকারী এবং অন্যান্য আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞবৃন্দ মৎস্য কৌটাজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়াদি তুলে ধরেন। এছাড়াও গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক হাবীব তার দুই বছরের গবেষণায় তার অভিজ্ঞতা এবং প্রাপ্ত ফলাফল কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন। পাশাপাশি এই কর্মশালায় ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ কৌটাজাতকরণ পদ্ধতি গবেষণাগারে সরেজমিনে পরিদর্শন করানো এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়ানোর মাধ্যমে উদ্ভাবিত ইলিশ মাছের কৌটাজাতকরণ প্রযুক্তিটি অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে হস্তান্তর করেন।
ধন্যবাদান্তে,
এ. এইচ. এম. মোস্তফা কামাল
অতিরিক্ত পরিচালক
জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর
শেকৃবি, ঢাকা
© 2024 Sher-e-Bangla Agricultural University. All rights reserved. Maintained by: ICT Cell, SAU.